সুমন নস্কর
করোনা কোনপথে হামলা চালাবে কেউ তা জানে না। সাবধানের মার নেই অবস্থা চারিদিকে। কি থেকে যে এই অদৃশ্য এই মাইক্রোস্কোপিক প্রাণীটি আপনার শরীরে ঢুকে পড়বে কেও জানে না। এর মোকাবিলায় আঁধারে সবাই। আপাতত সামাজিক দূরত্বের টোটকা বজায় রাখা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়া ও হাত স্যানিটাইজড করা ছাড়া কারও হাতে কিছু নেই। আমজনতা হোয়াটসআপ ইউনিভার্সিটি থেকে কেবল আতঙ্ক কিনছেন। কেউ কেউ অবশ্য সচেতনতাও কিনছেন সন্দেহ নেই। এসবের মাঝে বিরাম নেই খবরের কাগজ ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার । এগুলি জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে। কেউ কেউ ভুরু কুঁচকে বলছেন খবরের কাগজ তো বলতে গেলে বাসি খবর দেয়। আজকের খবরের বিশ্লেষণ থাকে কালকের কাগজে। সেটাই লোকে রসিয়ে রসিয়ে পড়ে। বহু মানুষের মনে আশঙ্কা এই খবরের কাগজ থেকেও ছড়াতে পারে করোনা। এদিকে বন্ধ ট্রেন, অন্যদিকে পাঠক নিতে চাইছেন না, সব মিলিয়ে কাগজের বিক্রিবাটা প্রায় বন্ধ। কাগজগুলি নিয়মিত প্রচার করছে সেখান থেকে করোনা ছড়ানোর কোনো চান্স নেই। কিন্তু তারা বুক ঠুকে কীভাবে সে কথা বলছে তা স্পষ্ট নয়। বহু হাত হয়ে কাগজ এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যায়। সেখানে সংক্রমণের ঝুঁকি কী এইভাবে কেবল ব্যবসার কারণে উড়িয়ে দেওয়া যায়?
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ তহবিলে সাহায্য চাইলেন মমতা, অত্যাবশকীয় পণ্য আটকালে কড়া ব্যবস্থা
বিক্রি না থাকলেও সংবাদকর্মীদের যেতে হচ্ছে। বড় কাগজগুলির ব্যাপার আলাদা।তাদের কাগজ ছাপার বন্দোবস্ত রয়েছে বেশ কিছু পয়েন্টে। নিজেদের পরিবহণ সিস্টেমও খুব পাকা না হলেও রয়েছে তাদের হাতে রয়েছে কিছু ব্যবস্থা । কর্মীদের মেডিকেল ইনসিওরেন্স রয়েছে। বেতন ভালো। ছোট কাগজগুলির এর কোনটিই নেই। এমনি সব অফিসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পর্যন্ত নেই। তারপরও বড় কাগজগুলি বন্ধ করেনি বলে তারাও সংবাদকর্মীদের শরীরের কথা তোয়াক্কা না করে তাদের অফিসে যেতে বাধ্য করছে। ইতিমধ্যেই কিছু ছোট কাগজ ছাপা বন্ধ রেখেছে। বাকি ছোট কাগজগুলো বড় কাগজের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রাজ্য সরকার কাগজগুলিতে বিজ্ঞাপন দেন। ফলে সরকারি বিজ্ঞাপন হারাতে চাইছে না এই ছোট কাগজগুলো। যদিও কাগজ শহরের গন্ডি পার হচ্ছে না। কেবল হাওড়া এবং শিয়ালদাতে তা গড়াগড়ি খাচ্ছে। তাহলে কি হবে, বড় কাগজ বন্ধ না হলে তারা করবে না।পণ করে বসে রয়েছে। দূর থেকে যাঁরা আসেন তাঁরা আসতে পারছেন না। কিন্তু কাছে যারা রয়েছেন তাদের একপ্রকারআনা বলপূর্বক আনা হচ্ছে। যাদের সংবাদ সংগ্রহের জন্য পাঠানো হচ্ছে এরা প্রত্যেকেই সম্ভাব্য করোনা ক্যারিয়ার। অথচ তারা বেমালুম ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বলা ভালো ঘুরতে বাধ্য হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: পুলিশের বাড়াবাড়িতে নষ্ট ১৫ হাজার লিটার দুধ, ১০ হাজার কেজি সবজি- অভিযোগ ই-কমার্স সংস্থাগুলির
সংবাদ কর্মীদের বাড়ি থেকে প্রবল বাধা আসছে। কিন্তু তাদের কাজ খোয়ানোর ভয় দেখানো হচ্ছে। ফলে মুখ সাদা করে তারা আসছেন। যেহেতু আজকাল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া রয়েছে, পোর্টাল রয়েছে , তাই খবরে কাগজ এই লকডাউনের সময় বন্ধ থাকলে কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। কিন্তু এখন ন্যূনতম মেডিকেল সুবিধা ছাড়া অকারণ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে এই চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর সংবাদপত্রের সংবাদকর্মীদের। সীমান্তে যাঁরা আমাদের প্রহরায় রত তিনি দেশের জন্য বুক পেতে বুলেট নিতে প্রস্তুত। এটা তার কাজের অঙ্গ। তার জন্য তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। তার পরিবারের কোথাও মানসিক ভাবে খারাপ খবরের জন্য প্রস্তুত থাকে। কিন্তু ছোট কাগজে যারা কাজ করে তাদের সেসব কিছুই নেই। বাইরের লোকের কাছে তারা সংবাদিক, রিপোর্টার। অথচ সবথেকে বেশি শোষিত হয় এরা। যৌন কর্মীদের থেকেও বেশি। তবে ঝুটা আত্ম মর্যাদার কারণে তা তাঁরা সামনে এসে সেসব বলতে পারে না । তারই সুবিধা নিয়ে বহুকাল ধরেই চলে আসছে এই শোষণ। অল্প মাইনে দিয়ে প্রচুর কাজ করিয়ে নেওয়ার মানসিকতা এই সংবাদপত্রের মালিকদের হাড়ে-মজ্জায়। তাদের জন্যই আজ বহু মানুষের প্রাণ বিপন্ন। কিন্তু নিজেদের কাগজ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও ভাবনা নেই তাদের। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক আপাতত এই কামনা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই!