পোষমানা স্বাধীনতা…

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

অভিজিৎ সিনহা

উনবিংশ শতকে যে-সব ধারণাগুলির পয়দা হয়েছিল, তার অন্যতম হলো উদারনৈতিক গণতন্ত্র। সম্ভবত সবচেয়ে টেঁকসই আর জনপ্রিয়ও বটে। ক্রমশ দেখা গেল, বিভিন্ন দেশ এই উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে গ্রহণ করল। আমাদের দেশও করল। এখন প্রশ্ন, গ্রহণ করলেও বাস্তবে কতটা গণতান্ত্রিক হয়ে উঠেছে আমাদের দেশ? বিশেষত এই মোদি-শাহ জমানায়? আমরা এখন সেই বিষয়টাই দেখব। এর জন্য হাতিয়ার করব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংগঠন রিপোর্টারস সানস ফ্রন্টিয়ার (আরএসএফ)-এর ২০২০ সালের প্রতিবেদনটি।

এই উদারনৈতিক গণতন্ত্রের অন্যতম চিহ্নায়ক হলো সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা। আবশ্যিক অঙ্গ বলা যেতে পারে। এখানে মূল বিষয়টি হচ্ছে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত এক সরকার, যে সরকার কাজ করবে জনগণের জন্য। এই সরকার সত্যই জনগণের স্বার্থে কাজ করছে কি না, বা এই কাজ করতে গিয়ে কোথায় ভুলত্রুটি হচ্ছে, তা দেখার ও মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য দরকার একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের। কিন্তু তা আদৌ এই মুহূর্তে এই দেশে রয়েছে কি না সে-বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। সাধারণ মানুষের মনেও, আর যে আন্তর্জাতিক সংগঠনটির কথা বলা হলো, সেই সংগঠনটিও তাদের ২০২০ সালের প্রতিবেদনে সংশয় প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, ২০১৮ সালে এই দেশে ৬ জন সাংবাদিক মারা গিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যাটা ঠেকেছে ০-য়। এই হিশেবে ভারতীয় সাংবাদিকরা হয়তো ভালো আছে মনে হবে কিন্তু আসলে তা নয়। ভারতীয় সাংবাদিকদের কাজ করতে হচ্ছে ভয়ঙ্কর এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।

কোন পরিবেশে ভারতীয় সাংবাদিকরা কাজ করছেন, তা তুলে ধরেছে এই প্রতিবেদনটি। এই প্রতিবেদনটি বলছে, ‘২০১৯ সালে কোনো সাংবাদিকের মৃত্যু হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও (ভারতে) সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বারংবার বিঘ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মীদের হিংসা প্রদর্শন, সাংবাদিকদের হুমকি প্রদান এবং দুর্নীতিগ্রস্ত স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া।’

ওই সংস্থাটির মতে, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারতের স্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪২-এ। গত এক বছরে দু-ধাপ পিছিয়েছে এই দেশ। আর এর কারণ হিশেবে বলেছে, ‘২০১৯-এর বসন্তে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। এতে ব্যাপক জয় পায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি। তার পর থেকেই সরকারি দলের হিন্দু জাতীয়তাবাদী লাইন অনুসরণ করার জন্য সংবাদমাধ্যমের উপর চাপ সৃষ্টির প্রবণতা বেড়েছে।’

আরও পড়ুন: দর্শকাসনে ২২৯২টি গাছ! ব্যতিক্রমী সুর মূর্ছনায় মেতে উঠলো অপেরা হাউস

এখানেই হয়েছে সংবাদমাধ্যমের সর্বনাশ। এবং একইসঙ্গে গণতন্ত্রের দফারফা। সংবাদমাধ্যমের মালিকরা বুঝে গেছেন, সাংবাদিকদের গুরুদায়িত্ব পালনে হ্যাপা অনেক, আর তাতে লাভও বিশেষ নেই। বরং সরকারি বিজ্ঞাপন চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। সুতরাং, ওইসব দায়িত্ব-ফায়িত্ব বিসর্জন দিয়ে খুল্লমখুল্লা নেমে পড়েছে শাসক দলের ভজনায়। জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলি কেন্দ্র সরকারের আর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি রাজ্য সরকারের গুণগান করেই চলেছে। একটিতেও সঠিক সংবাদ পরিবেশন হয় না। বঞ্চিত হন সাধারণ মানুষ। তাঁরা চান সরকার হোক ভুলত্রুটি থেকে মুক্ত। কেন্দ্রের, রাজ্যেরও। কিন্তু আজ সংবাদমাধ্যমগুলি থেকে তার দায়িত্ব না পালন করতে পারায় মাধ্যমগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তাঁরা।

এখনও যে-সব সাংবাদিকরা কেন্দ্রের শাসক দলের সমালোচনা করেন, তাঁদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। কখনও শারীরিক নিগ্রহ করা হচ্ছে তাঁদের, কখনও তাঁদেরকে ১২৪ (ক) ধারায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে নিরপেক্ষভাবে সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করা হয়ে উঠেছে প্রায় অসম্ভব। আর সে-কারণেই গজিয়ে উঠছে ‘গোস্বামী’দের মতো সাংবাদিকদের। এইসব সাংবাদিকের কাজই হলো সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো। এ এক মারাত্মক পর্যায়ে চলে এসেছে। দিনের পর দিন গৌতম নওলাখাদের মতো মানবাধিকার কর্মীরা, বিনা বিচারে বন্দি, অথচ কোনো উচ্চবাচ্য নেই। ভিমা কোরেগাঁও থেকে পূর্ব দিল্লিতে যাঁরা ঝামেলা পাকালেন তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বুক ফুলিয়ে, টুঁ শব্দ নেই কোথাও। জেলে কাফিল খান, সেখানেও নিশ্চুপ সবাই।

আমরা ক-জন জানি যে ৮০০ জন সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের আটকে রাখা হয়েছে? জামিয়া মিলিয়ার গবেষিকা সফুরা জারগরকে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও তিন বার জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়েছে। চতুর্থ বার তিনি যখন জামিন পেলেন, তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ভূমিকা সংবাদমাধ্যমের। কিন্তু কেন তাঁকে এতবার জামিনের আবেদন করতে হলো, তা সামনে আসছে না। যেমন সামনে আসছে না শাহীনবাগ প্রভৃতি সিএএ বিরোধী আন্দোলনের উপর নেমে আসা আক্রমণের কথা।

একটা খাঁচার মধ্যে কাজ করছেন আজকের সাংবাদিকরা। বড় একটা খাঁচা। তাতে কৃত্রিম পুকুর, কৃত্রিম গাছ, কৃত্রিম গুহা; সবই আছে। মাংসের সাপ্লাইও নিয়মিত। পেটপুরে খেয়েদেয়ে হালুম ডেকে দিবানিদ্রার বিলাসিতাতেও খামতি নেই কোনো। তবে ওই খাঁচার মধ্যেই।

আরও পড়ুন: কোয়ারেন্টাইন কারে কয়, সেকী কেবলই যাতনাময় ?

Gmail 6
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest