জিন্দিগি বড়ি হোনি চাহিয়ে লম্বি নেহি, প্রমাণ করলেন ইরফান খান

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

সৈয়দ আলি মাসুদ

আমি ফিল্ম বাফ নয়। তবে অন্য অনেকের মত ভালো অভিনয় বুঝতে অসুবিধা হয় না। সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কবি হবার প্রয়োজন নেই। সুবজ পাতায় হীরের মত যখন শিশির চমকায়, তখন কার না ভালো লাগে? তার জন্য বোদ্ধা হতে হয় না। ইরফানের অভিনয় আমার কাছে তেমনি ছিল।

একটা নিজস্বতা নিয়ে এসেছিলেন তিনি। ইরফানকে দেখে নাসিরুদ্দিনের যোগ্য উত্তরসূরি মনে হয়েছিল।তাঁর সাবলীল প্রাণবন্ত অভিনয় মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। যেকোন রোলকে নিজস্বতা দিয়ে মোল্ড করে দেবার একটা সহজাত প্রতিভা ইরফানের ভিতরে ছিল। সেখানেই তিনি অনন্য। মানুষের বেঁচে থাকা কেবল দিনের সমষ্টি নয়। মানুষ অমর হয় তার কাজে। এই দেহ নশ্বর। তাকে ধরে রাখা যায় না। পাখি পালিয়ে যাবেই। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে তাই কাজ করে যেতে হয়। সে কাজই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। তবে অমরত্বের জন্য কাজ করা যায় না। যিনি অমরত্বের জন্য কাজ করতে চেষ্টা করবেন, অমর হওয়া তো দূরের কথা, তিনি কাজই করে উঠতে পারবে না । গেলাসে জল নিয়ে হাঁটার সময় যদি সর্বদা জলের দিকে তাকান তাহলে জল ছলকে যাবেই। হাঁটতে হবে মাটির দিকে তাকিয়ে। ইরফান মাটির দিকে তাকিয়ে পথ হেঁটেছেন। তাই তিনি সফল। তাই মানুষের স্মৃতিতে, রুপোলি ইতিহাসের পাতায় তাঁর চিরস্থায়ী আসন পাতা রইল।

তবে এমন মৃত্যুতেও কিছু রাজকীয়তা থাকে। অতি বার্দ্ধক্যে যে মৃত্যু তাতে আপামর মানুষের মন এমন করে কেঁদে ওঠে না। সকালের আকাশ মেঘে ঢাকা পড়ে আঁধার হলে তা নিয়ে মানুষ চর্চা করে। কিন্তু সুর্যাস্তের পর যে আঁধার তা স্বাভাবিক। ইরফান আমাদের মধ্যাহ্নের সূর্য। মৃত্যুর মেঘ তাকে সাময়িকভাবে আড়াল করে দিল। মৃত্যু তো নতুন কিছু নয়. তা সাময়িক বিচ্ছেদ। জীবন তো বেঁচে থাকে মৃত্যুর পরেও। ইরফানকে কোনওদিন ছুঁতে পারল না বার্ধক্য। চিরদিন সজীবতায় ভরপুর ওঁর দুটো সজল চোখ সকলের সামনে থেকে যাবে না।

আরও পড়ুন: ইরফান খানের কিছু অসাধারণ ডায়লগ যা পড়লে আপনার গায়ে কাঁটা দেবেই…

একে মৃত্যু বলো না বস। এত ফিরে যাওয়া। এমন করে ফিরতে পারে কজন। বলিউড জগৎ মানে নানা কাদাছোড়াছুড়ি। সে সব তার গায়ে লাগে নি। কোনো রাজনৈতিক দলের পতাকার নিচে নিজের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করেননি। আসলে একজন জাত শিল্পী এমনই হয়। একজন গাছের মত স্বাধীন একটি লোক চলে গেলেন পার্থিব জগৎ থেকে। নাসিরুদ্দিনের যোগ্য উত্তরসূরি যাকে মনে করতাম তিনি চলে গেলেন আগেই। তাঁর গোটা জীবনে মাত্র ৫৩ বার এই পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে। সৌর ক্যালেন্ডারে সত্যি এটি খুবই কম সময়। তবে সূর্যের প্রদক্ষিন সংখ্যা দিয়ে সব কিছু নির্ণয় হয় না। যদি হত তাহলে কচ্ছপকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হত! রুপালি জগতের বহু মুকুটই ছিল ইরফানের ঝুলিতে। তার ফিরে যাওয়া চলচিত্রপ্রেমীদের কাছে বিরাট শূন্যতা সন্দেহ নেই। তিনি থাকলে অসাধারন সব অভিনয় আমরা উপহার পেতে পারতাম।

ওঁর অসুস্থতার খবর যখন প্রথম জানতে পারলাম মন খারাপ হয়েছিল খুবই। দুরারোগ্য অসুখের সঙ্গে লড়াই করে মনের জোর হারাননি। সেটাই আমাদের সকলের জন্য শিক্ষা। যেদিন ওর অসুস্থতার খবরে মন খারাপ হয়েছিল সেদিনই বুঝেছিলাম ওঁর জীবন ষোলো আনা সফল। যার সঙ্গে জীবনে দেখা হয়নি, কথা হয়নি, কোনও সম্পর্ক তৈরী হয়নি, তাঁর অসুস্থতায় আমার মন এমন খারাপ কেন ? আজ তাঁর প্রয়াণে স্বজন হারার মত কষ্ট পাচ্ছেন কতজন। লকডাউনের দিনে তাদের মনজুড়ে মনখারাপের মেঘ। যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি নয়, মানুষের মনে বাসা বাঁধাই আসল কাজ। সে কাজে যিনি সফল তাঁর ফিরে যেতে কষ্ট নেই গো কত্তা!

আরও পড়ুন: ‘আমাদের প্রজন্মের সেরা অভিনেতা ইরফান খান’,স্মৃতিচারণা বলিউডের তিন খানের

Gmail 4
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest